ধারাবাহিক উপন্যাস নিয়তি/ পর্ব ১০ ও ১১

 হাসান কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে মেয়ে সহ সমস্ত কিছু গুটিয়ে নিয়ে চলে যাবে ইন্ডিয়াতে, এই প্ল্যান ই ছিল ও পূলক সেনের। জয়া যখন বুঝতে পারলো তার বাবা হাসানের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, তখন সে হাসান কে সতর্ক করবে বলে ঠিক করলো। এর মাঝে পূলক সেন কিডনি র‍্যাকেটের সন্ধান করতে গিয়ে এক অবাক করা তথ্য আবিষ্কার করলো। কিডনি কামাল রা যে গ্রুপের সাথে কাজ করে সে গ্রুপের বড় এক নেতার সাথে দেখা করেছিল পূলক সেন রাজধানীর এক অখ্যাত ক্লিনিকে, সেখানে হঠাৎ ই দূর থেকে সে দেখতে পেরেছিল হাসান কে। দ্রুত ক্লিনিকের এক কর্তা ব্যাক্তির কাছ থেকে জানতে পারে হাসান তার একটা কিডনি বিক্রির চেষ্টা করছে। পূলক সেন ভ্রু কুচকালো, কেন হাসান কিডনি বিক্রি করবে! আরেকটু তথ্য যাচাই করতে গিয়ে সে অভাবনীয় এক তথ্য শুনলো হাসান নাকি তার মায়ের চিকিৎসার জন্য তার নিজের কিডনি বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু জয়ার কাছ থেকে সে শুনেছিল, আবিদের দেয়া অথ্য অনুযায়ী মায়ের চিকিৎসা খরচ চালাতেই নাকি হাসানের কাজিন রিনিকে বিয়ে করেছে হাসান। পূলক সেনের মাথায় এক ধুর্ত প্ল্যান আসে।

জয়া হাসানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। হাসান আজ হঠাৎ এত বছর পর জয়ার এমন শক্ত থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ চিন্তায় পড়ে যায়, হাসান খুবই হাসি খুশি উৎফুল্ল মানুষ। তার সেন্স অফ হিউমার ও মারাত্বক, সে হেসে জয়াকে বলে ‘ কী ব্যাপার ম্যাডাম কে আজ যে খুব বেশি সুন্দরী লাগছে, ব্যাপার কি!! আজ কী রাগ টা বেশি নাকি’

জয়া বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল- ‘হাসান, আমার তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে, এর সাথে তোমার আমার জীবন জড়িত’

হাসান তার স্বভাবসুলভ ফাজলামির ভঙ্গিতে বলল- ‘আমার জীবন তো সবসময় ই তোমার সাথে জড়িত বলে জয়াকে জড়িয়ে ধরতে গেলে, জয়া হাত বাড়িয়ে থামালো। "ছি হাসান, এত বড় অভিনেতা তুমি কবে হলে! আমাকে বন্ধু মহলে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বেড়াও অথচ বাসায় কাউকে বলতে পারোনাই, আবার মায়ের অনুরোধে কাজিন কে বিয়ে করেছ। এত বড় ফ্রড তুমি কবে হলে!'

হাসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয়া কে বলে- 'তুমি যা বললে তার উত্তর খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে দিব, তবে হ্যা রিনির সাথে কাগজে কলমে যা হয়েছে তা আর যা-ই হোক বিয়ে না। ওর সাথে কাগজের বন্ধন ছিন্ন করেই আমি তোমাকে সব বলব। আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ'।

'তার মানে তুমি রিনিকে বিয়ে করেছ'

'করতে বাধ্য হয়েছি' চুপ করে থেকে নিচু গলায় জানাল হাসান।

'হাসান তুমি কী বলছ, তুমি বুঝতে পারছো? তোমার আমার আইনত কোন বিয়ে হয় নাই, একে তো আমরা ভিন্ন ধর্মের, তার উপর শুধু তোমার আমার বন্ধুরা জানে আমি তোমার স্ত্রী, আমার কোন আইনগত স্বীকৃতি নেই। আজ যদি রিনি সামনে এসে দাঁড়ায় আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো বলতে পারো তুমি!' কেঁদে ফেলল জয়া। এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না হাসান জয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল-'এমন কখনো হবে না, কোনদিন ও না। আমার স্ত্রী কেবল তুমি'। কেঁদে ফেলল হাসান।

এক ঝটকায় হাসানকে সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল জয়া। হাসান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল, একটু দাঁড়াও বলে পকেট থেকে ছোট একটা প্যাকেটে একটা পায়েল বের করে সামনে ধরলো জয়ার- এটা তোমার, যেদিন এর রহস্য বের করবে, সেদিন আমাকে জানবে। জয়া হাত বাড়িয়ে পায়েল্টা নিয়ে কোন রকমে বলল- হাসান এসব লুকোচুরি খেলা আর কতদিন, কতদিন আর হেয়ালি।

'পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় দাও আমাকে প্লিজ। মাকে সব বলব আমি' জয়া একটু হাসলো আর বলল- একটা সারপ্রাইজ গিফট আছে তোমার জন্য।

'কী,দাও'

'উহু এখন না, শেষ পরীক্ষার দিন জানবে'

হাসান হাসল। হাসানের হাসি দেখে জয়ার মনে হল দুনিয়ার সব চেয়ে সুন্দর হাসি তার হাসানের। সে হাসানের বুকে মাথা রাখল। হঠাৎ মনে পড়ল জয়ার, আচ্ছা শোন তুমি একটু সেইফ থাকবে কয়দিন, বাবা তোমার আমার ব্যাপারটা জেনে গেছে, অবশ্যই বাবা তোমার উপর কঠিন প্রতিশোধ নিবে। তুমি বাসা থেকে একা বের হয়োনা। সম্ভব হলে হলে বন্ধুদের কাছে চলে যাও।"

'কি বলছো! এমন কী হয়েছে'

'আমি যা বলছি সেটাই সত্যি, বাবা খুনি ভাড়া করেছে তোমার জন্য। তুমি প্লিজ পালিয়ে যাও'

হেসে উড়িয়ে দিয়ে জয়ার বুকে মুখ নামালো হাসান। ভীষন দস্যু হাসান এখন দুর্দান্ত এক প্রেমিক, দুনিয়ার সব টেনশান উড়িয়ে দিতে এই তীব্র প্রেম ই যথেষ্ট জয়ার। জয়া এখন ডুবে আছে হাসানে। জয়া ফিসফিস করে তখন বলছিল-আমি তোমাকে ভালবাসি হাসান, তুমি শুধুই আমার।।

রিনির সামনে পলিথিনে মোড়া এক লাশ, রিনি হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে আছে সেইদিকে। স্বচ্ছ পলিথিনের মাঝে কম্বল পেচানো এক লাশ। দুই তিন স্তরে পলিথিল পেচানো থাকায় এয়ার টাইট হয়ে গিয়েছে। কোন দুর্গন্ধই আর নাকে লাগছে না। রিনি দরদর করে ঘামছে, তার গা গোলাচ্ছে, সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এই লাশ কার, হাসানের নয়তো! পুলিশে ফোন দেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না। তৃষ্ণায় গলায় শুকিয়ে কাঠা হয়ে গেছে রিনির। প্রচন্ড ভয়ে দিশেহারা রিনি পানি খুজঁছিল তখন ই নিচে পুলিশের গাড়ির শব্দ পেল সে। কি করবে বুঝে উঠতে না উঠতেই কয়েকজনের পায়ের আওয়াজ পেল রিনি তবে কী পুলিশ আসলো এখানে! কিন্তু তা কী করে সম্ভব। সে এখানে এসেছে কে ই বা জানে! সে দৌড়ে পালাবার কোন রাস্তা খুজঁতে লাগলো। রুম থেকে বেরিয়ে সে বিল্ডিং এর পেছন সাইডটা তে গেল, সেখানে দিয়ে নামার কোন রাস্তা খুজেঁ না পেলেও, তাকে অনুসরন কারী লোক টিকে ঠিকই দেখতে পেলো। ভ্রূ কুচকেঁ তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

হাসান জয়ার সামনে তার হত্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও মন থেকে কিছুতেই মুছতে পারছেনা পূলক সেনের জিঘ্যাংসা। সে জানে জয়ার বাবা ঠিক ততোটাই ঘৃণা তাকে করে যতটা ঘৃণা করলে একজনকে খুন করা যায়। এর পেছনে একটা ছোট গল্প আছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক পূলক সেনের একজন রক্ষিতা ছিলেন দেশের নামকরা এক নৃত্যশিল্পী। হাসান একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ঐ নৃত্যশিল্পীকে বন্ধুদের সাথে গিয়েছিল আমন্ত্রণ জানাতে, সেই নৃত্যশিল্পীর বাসায় লুংগী গেঞ্জি পরা পূলক সেনকে দেখে কাহিনী বুঝতে দেরি হয় নি হাসানের। শিডিউল ছাড়াই এক সিনিয়র আপুর রেফারেন্সে বেশ রাত করেই হাজির হয়েছিল হাসানরা। হাসানকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন পূলক সেন। মিডিয়ার লোক হয়েও মিডিয়ার সামনে খুব একটা না আসায় হাসানের অন্য বন্ধুরা তাকে চিনতে পারে নি। সেই নৃত্যশিল্পী উনাকে ওদের সাথে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিল তার স্বামী হিসাবে। ঐ ঘটনার পর থেকে হাসানকে দুইচোখে দেখতে পারতো না পূলক সেন।।

রাতের ফ্লাইটে দেশ ছাড়ছে জয়া সেন, মুখে তার তৃপ্তির হাসি। অনেকগুলো সমীকরন মিলিয়েছে সে আজ রাতে। তার বাবার খুনি হাসানকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সে, তার বিয়ে করা বউ রিনিকেও খুনের দায়ে ফাসিঁয়েছে জয়া। তার তুখোড় অপরাধী প্রবন বুদ্ধির কাছে কত অসহায় ই না হয়ে গেল অকৃতজ্ঞ হাসান আর তার পরিবার, এই কথা ভাবতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠল জয়ার।

পুলিশের শব্দ পেয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবল রিনি, কোন মিথ্যা কথা সে বলবে না আজ পুলিশ কে। নিজে এগিয়ে গিয়েই দরজা খুলে পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল- 'বাহ আপনারা চলে এসেছেন, আমি এখন ই আপনাদের কল করতাম। প্লিজ দেখুন আলমারির মধ্য থেকে কম্বলে মোড়া একটা লাশ রয়েছে'

পুলিশ বলল- নাটক বন্ধ করুন। আমাদের কাছে খবর আছে আপনি অবৈধ ভাবে এই বাসায় ঢুকেছেন, এখন আবার লাশের খবর ফেঁদেছেন।

আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জয়ার ফ্লাইট ছাড়বে , সে ফোন করল কিডনি কামাল কে, "কী খবর কামাল, মেয়েটার কী অবস্থা'

'পুলিশ মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেছে, আর ঐ বাসায় একটা লাশ পাওয়া গেছে'

'ঠিক আছে, তোমার কাজ শেষ। তোমার একাউন্ট টাকা পৌছে গেছে'

প্লেনের সিটে বসে নিউজ চ্যানেল স্ক্রল করছিল জয়া- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্র হাসান খানের বাসা থেকে গলিত লাশ উদ্ধার, হাসানের স্ত্রী গ্রেফতার। ধারনা করা হচ্ছে লাশ টি হাসানের'

হেসে উঠলো জয়া, ততক্ষনে রানোয়েতে ছুটতে শুরু করেছে এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লী গামী ফ্লাইট টি।

চলবে.......


একাদশ
পর্বঃ

রিনি গ্রেফতার হল illegal & criminal tresspassing এর দায়ে, পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪৪১ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হল অন্যায় ভাবে এবং অসত উদ্দেশ্যে কারো ক্ষতি করার অভিপ্রায়ে. রিনি ঠিক যে সময়ে গ্রেফতার হল, সময়েই তার শিডিউল করা সোস্যাল মিডিয়া পোস্ট টি ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে রিনি হাসানের সাম্ভাব্য খুনি হিসাবে জয়াকে দায়ী করেছে। রিনি লিখেছিল, জয়া সেন নিজেকে হাসানের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করলেও তাদের বিয়ের কোন আইনগত প্রমাণ পাওয়া যায় নি, এবং হাসানের ঘরে একটি সিসি টিভি লাগানো আছে সেটার ফুটেজ পুলিশের দেখা উচিত। এছাড়া, রিনির মতে হাসানের পরীক্ষা না দেয়ার ব্যাপার টিও জয়া আগে।থেকেই জানতো, সম্ভবত আবিদ কে সে হাত করেছিল টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে, আবিদের মৃত্যুটিও যে প্রশ্নবিদ্ধ তা জানাতে ভুলেনি রিনি।।রিনি প্রমাণ হিসাবে জয়া এবং আবিদের কথোপকথন টির অংশবিশেষ পোস্ট টির সাথে তুলে ধরেছে।

রিনির ভাইরাল হওয়া পোস্ট টা পুলিশের দৃষ্টি গোচর হওয়ায়, তারা দ্রুত লাশের পোস্ট মর্টেমের ব্যাবস্থা করে, একে তো লাশ টা প্রায় পচেঁ গলে গেছে তার উপর একটা আংগুল নেই। পুলিশের ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল ফোর্স কাজ করছে তদন্তের জন্য। ইতিমধ্যে কেইস টা একটা হাই প্রোফাইল কেইসে পরিনত হয়েছে। এতদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নড়নড়ে বসেছে কেইস টা নিয়ে। রিনির বাবা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে রিনির দ্রুত জামিনের। কিন্তু এমন একটা কেইসের সাস্পেক্টেড খুনিকে অবশ্যই এত সহজে জামিন দেয়া হবেনা।

পুলিশ যখন দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করল, তারা রিনিকে খোলা আলমারির পাশে লাশের সাথে দেখল। রিনিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হলো। তার বাবার প্রভাব খাটিয়ে দেওয়া ফেসবুক পোস্টের ভিত্তিতে জনমত ততক্ষণে রিনির পক্ষ নিলেও, এই দৃশ্য তাকে প্রধান সন্দেহভাজন করে তুলল।

পুলিশের স্পেশাল ইউনিটের একটি দল হাসানের বাসাটিতে তল্লাসি চিরুনি চালিয়েছে। রিনির কথা মতো বাসায় একটি আই পি ক্যামেরার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যার কোন ডাটা ব্যাংক নেই, অর্থাৎ এই ক্যামেরার মাধ্যমে কেউ একজন দূর থেকে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার এর মাধ্যমে এই বাসার লোকজনের উপর নজর রাখত। বাসার ফ্রীজে একটা ফ্রোজেন আংুল পাওয়া গেছে। যেটা পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এটি বাসায় পাওয়া যাওয়া লাশের আংুল। কিন্তু আংুল টি কেন কেটে ফেলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ঘরে কোন সাস্পেক্টেড ওয়াপন পাওয়া যায় নি। হাসানের মোবাইল ফোন টি সিম হীন অবস্থায় পাওয়া গেছে ড্রয়ারে। মোবাইল এবং হাসানের ব্যাবহৃত কম্পিউটার টি পুলিশ নিজেদের দায়িত্বে নিয়েছে। পুলিশের যে চৌকস টিম টি কাজ করছে তারা তাদের দিন রাত প্রায় এক করে দিয়েছে এই কেইসের উপসংহার টানতে।

এদিকে, মামলার তদন্তভার পেলেন স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের চৌকস কর্মকর্তা সাদাব মোহাম্মদ। প্রথম পাতার খবর "ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হাতে খুন পুলক সেন" দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকালেন। পুলক সেন ছিলেন একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক; সাদাব বুঝতে পারলেন—এই 'উগ্রবাদ' তত্ত্ব আসলে গল্পটিকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা মাত্র। তার মনোযোগ গেল রিনির করা সেই রহস্যময় ভাইরাল পোস্টের দিকে এবং হাসানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনার দিকে। সাদাব নিশ্চিত হলেন—এই গল্পে দুটো খুন নয়, রয়েছে এক নিখুঁত ষড়যন্ত্র।

দিল্লী গামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে জয়া চোখবুজে আছে। আজ প্লেনে ওঠার পর, প্রথম তার সন্তানের নড়াচড়া টের পেল জয়া, পাশে বসা মা'কে পেটে হাত দিয়ে দেখালো জয়া। ভীষন আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছে আজ সে, হ্যা হাসানের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে তার। কিন্তু একটু আর মন খারাপ হচ্ছেনা। হাসান তার বাবার খুনি। তার চোখের সামনে তার বাবাকে খুন করেছে হাসান। জয়া চাইলে সেইদিন হাসান কে শিক্ষা দিতে পারতো। কিন্তু সেই মুহুর্তে সে হাসানকে শাস্তি দিতে চায় নি নিজের ভয়ে, তার মনে হচ্ছিল সে হয়তো নিজেই হাসানের হাতে খুন হয়ে যাবে। হাসান শুধুই তার। হাসান জীবিত কিংবা মৃত যা- হোক কেবল মাত্র তার। কোন রিনি কিংবা কান্তার সে হতে পারেনা। কিন্তু হাসান তার বাবার খুনের জন্য দায়ী। এই কষ্ট টা তার কখনো যাবেন।

প্লেনের ক্যাপ্টেনের ঘোষোনায় সম্বিত ফিরল জয়ার, প্লেন টি ল্যান্ড করছে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে। জয়া সেন এখন নন্দিতা ব্যানার্জী। নন্দিতা ব্যানার্জী নামে দেশ ছেড়েছে জয়া সেন। নিজের পরিচয় গোপন করে নতুন পরিচয়ে বাচঁবে আজ থেকে।

ইমিগ্রেশন পেরিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে আসলো জয়া। দূর থেকে হাত নাড়ছেন এক ভদ্রলোক। মুখে দাড়ি আর মাথায় পাগড়িই বলে দিচ্ছে, উনি শিক। আচ্ছা ইনি তাহলে বলরাম সিং, উনি জয়া ওরফে নন্দিতা আর আর না তার মাকে রিসিভ করতে এসেছেন হাসপাতালের পক্ষ থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছ থেকে এক অদ্ভুত তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্যটি কেন আগে প্রকাশ পায় নি, সে এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। হাসানের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেশ আগে। যে পরীক্ষার দিন সে নিখোঁজ হয়েছিল, সেটা ছিল হাসানের ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা। সেই জন্য হলের অন্য কেউ তাকে চিনতে পারেনি। জুনিয়র এক ছেলের হলের বাইরে থেকে তোলা সেলফিতে একজনকে পেছনে থেকে দেখা যাচ্ছে নীল সাদা চেক-শার্ট পরা কিন্তু মুখাবয়ব স্পষ্ট না, হাসানের এক কোর্স শিক্ষক বেনিফিট অফ ডাউটে ছেলেটিকে হাসানের মত বুএ সনাক্ত করেছেনে। রোল নম্বর মিলিয়ে দেখা গেল হাসানের সিট পড়েছিল অন্য নিয়মিত সব ছাত্রের চেয়ে দূরে, তাই সেদিন কারো সাথেই আর দেখা হয় নাই। হাসানের সাথে সিট পড়েছিল আবিদের। আবিদ মৃত তাই সত্য মিথ্যা জানার অবকাশ নাই। ফাইয়াজ কে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানল তার সাথে পরীক্ষা হলে কথা হয় নি কোন সে দূর থেকে দেখেছে হাসানকে পরীক্ষা হলে ঢুকতে। পরীক্ষার টেনশানে সে ওতো খেয়াল করতে পারেনি।

পুলিশের একটি দল জয়ার বাসায় গিয়ে হতাশ হলো। জয়ারা গতকাল বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানেনা। জয়া বা পূলক সেন কারো একাউন্টে একটা টাকাও নেই, খুব আশচর্যজনক ব্যাপার। ব্যাংকের ডিটেইলস চেক করে জানা গেল, জয়া গত কয়েকদিনে প্রায় কোটি টাকার মত ক্যাশ তুলেছে। আর প্রায় ১০ লাখ ট্রান্সফার করেছে হাসানের মায়ের একাউন্টে। যদিও হাসানের মা এই বিষয়ে কিছু জানেনা বলেই জানিয়েছেন।

কারাগারের নোংরা পরিবেশে রিনির দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে কিছুতেই ভাবতে পারছেনা সে জেলের ভেতরে। রিনি খুব ঠান্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা ভাবার চেষ্টা করতে লাগলো, জয়া অসম্ভব ভালবাসতো হাসানকে। তার পক্ষে কী আসলেই হাসান কে মারা সম্ভব। যদি জয়া খুন না করে থাকে তবে কে খুন করল হাসানকে। আচ্ছা সে- বা কেন হাসান কে মৃত বলে ভেবে নিচ্ছে। যদি হাসানের না হয় তাহলে লাশ টা কার হতে পারে! আজ রিনির সাথে দেখা করতে আসবেন রিনির বাব।।রিনির বাবা এক অদ্ভুত তথ্য জানালো রিনিকে, হাসানের ঘরে পাওয়া লাশ টা হাসানের নয়। লাশটির বয়স ৫০ থেকে ৬০ এর মাঝমাঝি কোন অমুসলিমের। পুলিশের সন্দেহ লাশটি পূলক সেনের। কনফার্ম হওয়ার জন্য জয়া বা তার মাকে খুজেঁ পাওয়া যায়নি। হাসানের বাসায় লাগানো আই পি ক্যামেরার কোন ক্লু পাওয়া যায় নি। এই কথায় রিনির মাথায় একটা প্রশ্ন জাগলো আচ্ছা , ক্যামেরা টা ইন্সটল করতে নিশয়ই কোন সফটওয়ার লেগেছে, সেখানে তো কোন না কোন একাউন্ট দিয়ে লগ ইন করতে হয়েছে, পুলিশ কী সেটার ট্রাই করছে না!

Comments

Popular posts from this blog

ধারাবাহিক উপন্যাস নিয়তি/ পর্ব ১৬ (সমাপ্তি)

ধারাবাহিক উপন্যাস নিয়তি/ পর্ব ০১ ও ০২

ধারাবাহিক উপন্যাস নিয়তি/ পর্ব ১৪ ও ১৫